কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একই গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুইপক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ১ জন নিহত হয়েছে। আজ শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক ওই গ্রামের খালপাড় মহল্লার ধন মিয়ার ছেলে ইকবাল মিয়া (২৮)।

এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ মো. সফিকুল ইসলাম। এ ঘটনায় আরো ৩০ জন আহত হয়েছে।

এদের মধ্যে শাফি ব্যাপারী (৬৫), হোসাইন (২০), ইয়াছিন (২৫), রাকিব (৩২) শাহ আলম (৩০) তোফাজ্জল (৩৫), হেলেনা বেগম (৩৫) ও লাদেন (২০) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন৷ বিকাল থেকে পর্যায়ক্রমে রোগী বাড়তে থাকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৯ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন৷ এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় লাদেন, হেলেনা বেগম, শাহ আলম ও শাফি ব্যপারিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নিয়োজিত মেডিকেল অফিসার ডা. ফারিয়া নাজমুন প্রভা।

জানা যায়, ৫৬ বছর যাবত চলছে দুই বংশের দ্বন্দ্ব। বংশ দুটি হলো উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের কর্তা বাড়ি ও সরকার বাড়ি।

সরকার বাড়ি পক্ষে নেতৃত্ব দেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা সরকার শেফায়াত উল্লাহ। আর কর্তা বাড়ি পক্ষের নেতৃত্ব দেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হক।

দুই বংশের দ্বন্দ্বে ইকবাল মিয়াসহ উভয় পক্ষের খুন হয়েছে ১৪ জন। চলতি বছরের গেল ১৬ জুন ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই বংশের মধ্যে সংঘর্ষে কর্তা বাড়ির নাদিম গুরুতর আহত। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেন।

গেল ৬ আগস্ট ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মেন্দিপুর পূর্ব পাড়া এলাকায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। পরদিন ৭ আগস্ট একই ঘটনায় সংঘর্ষে টেটার আঘাতে জহিরুল্লাহ নামে একজন নিহত হয়।

এদিকে নাদিম হত্যার ঘটনায় সরকার বাড়ির চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ, তার ভাই ও দুই ছেলেসহ ৮৩ জনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করে কর্তা বাড়ির পক্ষ।

পরে সরকার বাড়ির ৬৯ জন কিশোরগঞ্জ কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন বিচারক।

গেল ১৩ আগস্ট সরকার বাড়ির লোকজন জামিনে মুক্তি পায়। মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করলে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ফলে বিরতিহীন চলছে এ সংঘর্ষ। আর এ কারণে উভয়পক্ষের ঘরবাড়ি ব্যপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের থামাতে পরেনি৷ আজ শুক্রবার ৩টার পর থেকে ফের দুই বংশ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় ইকবাল মিয়া নামে একজন নিহত হন। আহত হন ৩০ জন।

এ বিষয়ে সরকার বাড়ির পক্ষে হাজী আনোয়ারুল হক বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে কর্তাবাড়ির লোকজন আমাদের বাড়ির লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের লোকজনের টেটার আঘাতে আমাদের বাড়ির ইকবাল নিহত হয়েছে। আমরা এর দৃষ্টান্তমুলক বিচার চাই।

আর কর্তা বাড়ি পক্ষের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হক বলেন, পূর্ব শত্রুতা চলছে বহু বছর যাবত। আমি অতিষ্ঠ হয়ে ভৈরব শহরে দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করছি। আজকে মারামারি হচ্ছে শুনেছি। তবে নিহতের বিষয়ে কিছুই জানি না।

এ প্রসঙ্গে ভৈরব থানার (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম জানান, মৌটুপি গ্রামের মানুষজন আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যুগ যুগ ধরে সংঘর্ষ করছে। পুলিশও তাদেরকে দমন করতে পারছে না। আজকে দুই বংশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।

নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।