শুধু বরিশাল বিভাগ নয় সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশের মধ্যে বরিশাল জেলায় করোনার ব্যাপক সংক্রমন ঘটেছে। প্রতিদিন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যায়। মৃত্যুর সংখ্যাও নেহাত কম না।
এমন পরিস্থিতিতে চলমান রয়েছে কঠোর লকডাউন। অভাব বা ঘাটতি বলতে শুধু টিকার নামটিই উঠে আসছে। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্যি বরিশালে টিকা মজুদ থাকা সত্বেও তা প্রদান বা প্রয়োগে কৃতিম সংকটময় পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে।
শুধু সংকট বললে যথাযথ হবে না। টিকা প্রদানে অনীহা ও গাফলতিই এই সংকটের নেপথ্য কারন। আর এটি করছে বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। পহেলা জুলাই থেকে সরকার করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে নগরীর দুটি হাসপাতালে টিকা প্রদান কার্যক্রম চালু করার নির্দেশনা দিলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এমনকি কবে নাগাত টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে সে বিষয়ে করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা কিছু জানাতে পারেনি। করপোরেশন কর্তৃপক্ষের এমন দায়িত্বহীনতা ও গাফলতিতে স্বাস্থ্য সেক্টর সহ সাধারন নগরবাসীর মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে,গত ৩০ জুন রাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি প্রেরন করে তাতে ১ জুলাই থেকে নগরীর সদর হাসপাতাল ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। চিঠিতে বলা হয় পূর্বের মত সিটি করপোরেশনই টিকা প্রদান কার্যক্রম পরিচালণা করবেন।
চিঠির বিষয়ে সিটি মেয়র সহ করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবগত হলেও অদৃশ্য কারনে পহেলা জুলাই থেকে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করেনি। এমনকি গত ৫ দিন অতিবাহিত হলেও এ বিষয়ে কোন আলোচনা পর্যন্ত হয়নি। ফলে কবে নাগাত এ কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে তা সংশ্লিষ্ট কারো জানা নেই।
বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন বিষয়টি ডাঃ ফয়সাল দেখেন। তিনি মেয়রের সাথে এ বিষয়ে কথা বলছেন। তবে কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে জানতে ডাঃ ফয়সালের ফোনে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। আর এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি বিসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মতিউর রহমান।
বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মনোয়ার হোসেন বলেন টিকা কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে আমি আমার অবস্থান থেকে করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সাথে অসংখ্যবার যোগাযোগ করেছি।
কিন্তু তারা আমাকে বারবারই বলেছেন আলোচনা চলছে। তিনি বলেন সিটি করপোরেশন এলাকার ৩ টি হাসপাতালে করোনার টিকা প্রদান কার্যক্রমের সার্বিক দায়িত্ব সরকার সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে প্রদান করেছে। আমরা সহযোগীতা করি মাত্র।
যেহেতু প্রথম থেকেই টিকা প্রদানের সব কিছু করপোরেশন করেছে তাই জনবল থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয়ে প্রস্তুতিও রয়েছে তাদের। কেবল ঘোষনা দিয়ে শুরু করলেই হয়। কিন্তু কেন শুরু করছে না এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।
এদিকে চলমান এই মহামারীতে টিকা প্রদান নিয়ে বিলম্ব ও গাফলতি করায় সাধারন মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নগরবাসী বলছে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার করপোরেশন কর্তৃপক্ষের নেই।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে জেলা সিভিল সার্জনের কাছে ৩৭ হাজার ৯৯২ ডোজ ভ্যাকসিন মজুদ রয়েছে। যা প্রথম ডোজ হিসাবে প্রয়োগ করা হবে। আর আগামী দু এক দিনের মধ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক ডোজ টিকা চলে আসবে বলে সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
টিকা সংকটের কারনে গত দু মাস ধরে বরিশাল নগরীর ৩ টি হাসপাতালে টিকা প্রদান কার্যক্রম বন্ধ ছিলো।