শিরোনাম :
গত ৩১ আগস্ট দিবাগত রাতে ঢাকা হতে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া হানিফ পরিবহণের একটি বাস রংপুর জেলার পীরগঞ্জ এলাকায় পৌঁছার পর দুর্ধর্ষ ডাকাতির কবলে পড়ে। বাসে যাত্রীবেশী থাকা ডাকাত দলের সদস্যদের ছুরিকাঘাতে বাসের চালক মনজুর হোসেন (৫৫) গুরুতর আহত হয় এবং পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করে।
ওই ঘটনায় বাসের সুপারভাইজার মোঃ পইমুল ইসলাম বাদী হয়ে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানায় একটি মামলা রুজু করে যার নম্বর-৪। ঘটনাটি সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। এই চাঞ্চল্যকর হত্যাসহ ডাকাতির প্রেক্ষিতে র্যাব-১ তাৎক্ষনিকভাবে হত্যাকারী ডাকাত দলের সদস্যদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে দ্রুততার সাথে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৪ সেপ্টেম্বর র্যাব-১ ও ১৩ এর আভিযানিক দল আশুলিয়া ও গাইবান্ধা অভিযান পরিচালনা করে বর্ণিত হত্যাসহ ডাকাতির সাথে সরাসরি জড়িত শ্রী নয়ন চন্দ্র রায় (২২), জেলা-গাইবান্ধা, মোঃ রিয়াজুল ইসলাম @ লালু (২২), মোঃ ওমর ফারুক (১৯), মোঃ ফিরোজ কবির (২০), আবু সাঈদ মোল্লা (২৫), শাকিল মিয়া (২৬), ্আটক করে।
এ সময় তাদের নিকট থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিসহ ৫ টি ছুরি, লুটকৃত ০১টি মোবাইল ফোন এবং তাদের ব্যবহৃত ০৫ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
আটককৃত ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাসহ ডাকাতির সাথে সরাসরি জড়িত থাকার কথা জানায়। ঘটনার বিবরণে জানায়, গত ৩১ আগস্ট রাত আনুমানিক ৮ টার দিকে হানিফ পরিবহণের একটি নন এসি বাস (ঢাকা মেট্রো-গ-১৫-৩৮১০) রাজধানী ঢাকা হতে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে গাবতলী ছেড়ে যায়।
বাসটি রাত আনুমানিক সাড়ে ৮ টার দিকে সাভারে পৌঁছালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাত দলের ৩ জন (মোঃ রিয়াজুল ইসলাম @ লালু, আবু সাঈদ মোল্লা ও অপর ০১ জন) সদস্য এবং আনুমানিক ৯ টার দিকে নবীনগর পৌঁছালে ডাকাত দলের আরো ৩ জন (শ্রী নয়ন চন্দ্র রায়, মোঃ ওমর ফারুক ও মোঃ ফিরোজ কবির) সদস্য যাত্রীবেশে বাসে ওঠে।
পরে বাসটি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার বিটিসি মোড় অতিক্রম করার পর বাসে যাত্রীবেশে থাকা ডাকাত দলের সদস্যরা ডাকাতির উদ্দেশ্যে বাসটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করে। তারা প্রথমে বাসের চালক মনজুর হোসেনকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় চালক বাসটি ঘুরিয়ে আনার চেষ্টা করলে তারা আবার চালকের কাঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এরপর ডাকাত দলের সদস্য মোঃ রিয়াজুল ইসলাম @ লালু বাসটি চালাতে থাকে এবং ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যরা বাসে লুটপাট করতে করতে রংপুরের শটিবাড়ীস্থ ভাবনা ফিলিং স্টেশনে ইউটার্ন করে পূনরায় উল্টো পথে রওয়ানা করে। পলাশবাড়ী পৌঁছার আগে ডাকাতেরা ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে পীরগঞ্জের চম্পাগঞ্জ হাইস্কুলের সামনে রাত আনুমানিক ৩ টার দিকে যাত্রীসহ বাসটি রেখে পালিয়ে যায়।
এ সময় ডাকাতেরা যাত্রীদের মুঠোফোন এবং নগদ আনুমানিক ৩০/৪০ হাজার টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে গুরুতর আহত অবস্থায় বাসের চালক মনজুর হোসেনকে নিকটস্থ পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। এই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলটির সদস্য ১০/১২ জন। আসামী নয়ন চন্দ্র রায় এই ডাকাত দলের মূল হোতা। সে এই ডাকাত দলটিকে নিয়ন্ত্রন করত। এই ডাকাত দলের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবত উত্তরবঙ্গগামী বাসে সাধারণ যাত্রীবেশে উঠে ডাকাতি করে আসছিল।
