পারিবারিক কলহের জেরেই স্ত্রীকে হাতুর দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা নিশ্চত করেছে স্বামী তামিম।
একই সাথে গোপালগঞ্জে বসে হত্যা করে বরিশাল জেলার আগৈলঝড়ায় এনে মরদেহ ফেলে চলে যায় তামিমসহ তার ২ সহযোগী।
আজ শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এমনই তথ্য দিয়েছেন বরিশাল পুলিশ সুপারের অতিরিক্ত দায়েত্ব থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোছাইন।
তিনি আরো বলেন, বরিশালের আগৈলঝাড়ায় দাম্পত্য কলহের জের ধরে ২০ জানুয়ারি বুধবার রাতে আগৈলঝড়া থানা এলাকার নগরবাড়ি গ্রামের করিম শাহ্ এর ছেলে তামিম শেখ তার ২য় স্ত্রী নিহত রাশিদা বেগমকে গোপালগঞ্জে ডেকে নিয়ে যায়।
পরে রাতে হত্যার উদ্দেশ্য বিভিন্ন স্থানে ঘুরে গোপালগঞ্জ সদরের ঠুঠাবান্দ্রা গ্রামের বিল এলাকায় নিয়ে হাতুড়ি পিটিয়ে এবং ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে রাশিদাকে হত্যা করে।
মৃত নিশ্চিত হবার পরে আগৈলঝড়ার বাইপাস সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায়। এবং ১০ মাসের শিশু সন্তানটি দুরে ফেলে তারা গোপালগঞ্জে চলে যায়।
পথচারীরা মৃত মহিলার লাশ দেখে পুলিশকে সংবাদ দিলে ওসি (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। ওই রাতেই ওসি (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম অভিযান চালিয়ে ৩ ঘন্টার মধ্যে রাশিদার স্বামী তামিম শেখকে গোপালগঞ্জ জেলার বেদগ্রাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন।
গ্রেপ্তারকৃত তামিম শেখ প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম ছরোয়ার।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই আল আমিন শাহ্ বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
আগৈলঝাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম ছরোয়ার জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বুধবার রাত সোয়া একটার দিকে উপজেলার বাইপাস মহাসড়কের পাশে একটি ঘেরের পাড় থেকে রাশিদা বেগম (৩৫) এর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত রাশিদা আগৈলঝাড়ার নগড়বাড়ি গ্রামের মৃত করিম শাহ’র মেয়ে। একই সময়ে কান্নার আওয়াজ পেয়ে নিহত রাশিদার দশ মাস বয়সী শিশুপুত্র তানিমকে মায়ের লাশের ৫শ গজ দূরে সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
তামিমের সাথে সহযোগীতা করায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার বেপারীপাড়া গ্রামের ইদ্রিস দারিয়ার ছেলে মো. রুবেল দারিয়া ও বেদগ্রামের আ. ছালাম শেখের ছেলে মো. জুলহাসকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে থানার ওসি (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম অভিযান চালিয়ে ৩ঘন্টার মধ্যে গোপালগঞ্জ জেলার বেদগ্রাম থেকে ওই গ্রামের আনোয়ার শেখ এর ছেলে ঘাতক স্বামী তামিম শেখকে রক্তমাখা জুতা, জামাপড়া অবস্থায় গ্রেপ্তার করেন। ঘাতক স্বামী তামিম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যবসা ও কাজ করতো বলে পুলিশকে জানিয়েছে।
ঘাতক স্বামী পুলিশের কাছে অকপটে স্ত্রী রশিদা বেগমকে হত্যার প্রাথমিক দায় স্বীকার করেছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
হত্যায় ব্যবহৃত হাতুড়ি ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করেছে।
ঘাতক স্বামীর বরাত দিয়ে ওসি গোলাম ছরোয়ার জানান, দাম্পত্য কলহের জের ধরে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে। নিহত রাশিদার এটা দ্বিতীয় বিয়ে এবং ঘাতক স্বামী তামিমেরও দ্বিতীয় বিয়ে। দুই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়।
তামিমের আগে নিহত স্ত্রীর দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে, বর্তমানে রাশিদার ঘরে ১০ মাস বয়সী তানিম নামের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। রাশিদা তার স্বামীর প্রথম স্ত্রীর কারণে আগৈলঝাড়া উপজেলার ১নং ব্রীজ সংলগ্ন এলকায় শিশু পুত্র নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল আরো বলেন, ঘটনার দিন বুধবার নিহত রাশিদাকে নিয়ে গোপালগঞ্জের একটি হোটেলে অবস্থান করে ঘাতক স্বামী তামিম। রাত আটটার পরে সেখান থেকে বের হয়ে অপর লোকজনের সহায়তায় রাশিদাকে হত্যা করে ওই রাতে একটি মাহেন্দ্র ভাড়া করে আগৈলঝাড়ার উল্লেখিত স্থানে রাশিদার লাশ ও তার শিশু সন্তানকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ঘাতকেরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার, ওসি আগৈলঝড়া মো. গোলাম ছরোয়ার, তদন্ত মাজহারুল ইসলাম।